শিরোনাম

প্রকাশঃ ২০২১-০৩-২৬ ২১:০২:৪৯,   আপডেটঃ ২০২৩-০৯-২৯ ০৭:৫৩:২০


এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোদিবিরোধী বিক্ষোভে গুলি : তরুণ নিহত, আহত ২০

এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোদিবিরোধী বিক্ষোভে গুলি : তরুণ নিহত,  আহত ২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় সফর ও শুক্রবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে আশিক (২০) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। নিহতের ঘটনায় উপ্তত্ত হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া।  বিক্ষুব্ধরা লাশ নিয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ শুরু করে। 

পরে লাশ মাদ্রাসায় নিয়ে যায়। হাসপাতাল সুত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ২নং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরে আলম, পুলিশ সদস্য সহ ২০জন আহত হয়। শহরে থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে। সারা শহরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।  

নিহত আশিক জেলা শহরের দাতিয়ারার সাগর মিয়ার ছেলে। এর আগে বিকেলে জেলা শহরের কাউতুলীতে মাদরাসা ছাত্রদের বিক্ষোভে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, ‌‘নিহত হয়েছে, এমন একটি কথা আমরা শুনতে পেয়েছিলাম। তবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’

এর আগে শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় শহরের প্রধান সড়ক টিএ রোডে মাদ্রাসার ছাত্ররা ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা প্রধান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। মুহুর্তের মধ্যে শহরের সমস্ত দোকান পাট বন্ধ হয়ে পড়ে। 

বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বিক্ষুব্ধরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রেল স্টেশনে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। রেল স্টেশনের সিগন্যাল, মাস্টার রুম, কন্ট্রোল রুম অন্যান্যদের কর্মকর্তাদের কক্ষ ব্যাপক ভাংচুর করে। সমস্ত মালামাল একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেয়। রেল লাইনের ক্রিপার তুলে ফেলে বিক্ষুব্ধরা। সিগন্যাল বক্স ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর ফলে ঢাকার সাথে সিলেট ও চট্টগ্রামের সাথে সকল প্রকার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকাগামী কর্ণফুলী এ·প্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে প্রবেশ করার সময় বিক্ষুব্ধরা পাথর নিক্ষেপ করলে ট্রেনটি ফিরে যায়। জেলা পরিষদ কার্যালয় বিকেল সোয়া ৫টায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়। শহরের কাউতলী, ভাদুঘরে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়। সড়কে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় অবরোধ করা হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিশ্বরোড, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর, নন্দনপুর, মজলিশপুর, ঘাটুরাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। 

এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লা সকল যানবাহন বন্ধ রয়েছে। শহরের জেলা পরিষদ, পৌর মুক্ত  মঞ্চ, পৌর মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুারাল ভেঙ্গে ফেলে। স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্ঝা ও সড়ক সজ্জিতকরণ ব্যানার ফেস্টুরন ভেঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়। উগ্র বিক্ষুব্ধরা নরেন্দ্র মোদী বিরোধী শ্লোগান দেয়। 

এক সময় বিক্ষুব্ধরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা জজ এর বাস ভবনের মূল ফটকে হামলা চালায়। পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ প্রায় ৫শতাধিক লোক জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে গ্যারেজে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা ভবনের নিচ তলার জানালা। এসময় জেলা মৎসা অফিস, সিভিল সার্জন অফিস, ২নং পুলিশ ফাড়ি, ডাক বাংলাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। বিকেলের দিকে শহরের কাউতলী এলাকার দাতিয়ারা গ্রামের সাগর মিয়ার ছেলে আশিক (২৫) গুরুতর আহত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয়।

এদিকে, জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের সামনে বিজিবির সাথে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। বিজিবি ব্যাপক গুলি বর্ষন করে। কাউতলীতে পুলিশের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষকালে পুলিশ দফায় দফায় লাঠি চার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এসময় পুলিশ ব্যাপক গুলি বর্ষন করে। জেলা পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান নিহত হবার ঘটনা জানেন না বলে জানান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। 

জেলা প্রশাসক হায়ত উদ দৌলা খান জানান, পরিস্থিতি প্রশাসনের সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। 

সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করা হয়। প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক সম্মেলনে ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার দাবী করেন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আল মামুন সরকার।     



www.a2sys.co

আরো পড়ুন