শিরোনাম

প্রকাশঃ ২০২১-০৪-২১ ১৬:৪২:৪১,   আপডেটঃ ২০২৪-০৩-২৯ ০২:৫৪:৫৯


যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, স্বামী গ্রেপ্তার

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, স্বামী গ্রেপ্তার

লালমাই সংবাদদাতা

কুমিল্লার লালমাইয়ে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে রাস্তায় রেখে জনসম্মুখে নির্যাতনের ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের নজরে আসলে অভিযুক্ত স্বামী নাজমুল হাসানকে (২৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে পালানোর সময় নিজ গ্রাম থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। এর আগে মঙ্গলবার বিকালে নির্যাতনের শিকার মরিয়ম আক্তার আইরিন স্বামী, শাশুড়ি, ভাসুর ও শ^শুরকে আসামি করে লালমাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, লালমাই উপজেলার বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রেমনল গ্রামের কৃষক মমতাজ উদ্দিনের মেয়ে মরিয়ম আক্তার আইরিনকে (১৯) প্রেম করে বিয়ে করেন এই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়নের বড় চলুন্ডা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক আবুল খায়েরের ছেলে নাজমুল হাসান। নাজমুল বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের গৈয়ারভাঙ্গা বাজারস্থ খলিল মেডিকেল হলে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করতো। আইরিন ঔষধ ক্রয় করতে গেলে নাজমুলের সাথে পরিচয় ও প্রেম সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক বছর ধরে চলা সেই সম্পর্ক অনেকদূর এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে পরিবারের সম্মতি না পাওয়ার অজুহাতে নাজমুল আইরিনকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এরই মধ্যে গত বছরের ১১ অক্টোবর আইরিন বিয়ের দাবিতে নাজমুলের বাড়িতে অনশন করে। 

অনশনে বসলে স্থানীয় গ্রাম সর্দার ও গণ্যমাণ্যদের মধ্যস্থতায় নাজমুলের বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা আইরিনকে মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ১৪ই অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক ৩ লাখ টাকা কাবিনে আইরিনদের বাড়িতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই স্বামী নাজমুলসহ তার পরিবারের সদস্যরা আইরিনকে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে তারা আইরিনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। যৌতুকের টাকা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়ে আইরিন বাবার বাড়িতে বসবাস করে। গত ৭ই এপ্রিল স্বামীর সাথে দেখা করতে শ্বশুর বাড়িতে গেলে আইরিনকে যৌতুকের দাবিতে পুনরায় শারীরিক নির্যাতন করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। একপর্যায়ে স্বামী নাজমুল আইরিনকে ঘরে থেকে বের করে টেনে-হিঁছড়ে রাস্তায় নিয়ে আঁছড়ে ফেলে দেয়। ওই নির্যাতনের ১৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। 

বিষয়টি নজরে আসায় ২০ এপ্রিল দুপুরে লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব খোঁজ নিয়ে নির্যাতনের শিকার নারী আইরিনকে শনাক্ত করে লোক মারফত থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসময় আইরিন স্বামী নাজমুল হাসান, শাশুড়ি শামীমা বেগম, ভাসুর নজরুল ইসলাম ও শ্বশুর আবুল খায়েরের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করেন। 

তাৎক্ষণিক লালমাই থানা পুলিশের একাধিক টিম আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান করে। ২০ এপ্রিল রাতে পুলিশের উপস্থিতি জানতে পেরে পালানোর সময় নাজমুলকে নিজ গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

লালমাই থানার ওসি মোহাম্মদ আইয়ুব বলেন, নির্যাতনের ঘটনাটি সোস্যাল মিডিয়ায় দেখেই নির্যাতিতা নারীকে শনাক্ত করি এবং তার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রেকর্ড করি। প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে অভিযান চালিয়ে নির্যাতনকারী নাজমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। 



www.a2sys.co

আরো পড়ুন