শিরোনাম

প্রকাশঃ ২০২১-০৯-২৪ ১১:১৪:০১,   আপডেটঃ ২০২৪-০৪-১৭ ১১:৩৯:৫৩


গৌরীপুর বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত এলাকাবাসী!

গৌরীপুর বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত এলাকাবাসী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুমিল্লার দাউদকান্দির ঐতিহ্যবাহী গৌরিপুরে সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় পুরো গৌরিপুর বাজার। শুধু তাই নয়, বাজারের রাস্তাঘাট সয়লাব হয়ে যায় ময়লা-আবর্জনাসহ পানিতে। দেখা দেয় পরিবেশ বিপর্যয়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে পুরো বাজারের অলিগলি। মহাদুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষের।

উল্লেখ্য যে, গত সপ্তাহে টানা ৫/৬ ঘন্টা বৃষ্টির ফলে গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন পুকুরসহ রাস্তা-ঘাটে বড় ধরনের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এই জমে থাকা পানি সরাতে যান স্থানীয় পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোঃ হেলাল। এক সময় পুকুরের ভেতর ড্রেনের মুখের ময়লা আবর্জনার স্তুপ সরানোর সময় পানিতে ডুবে যায় হেলাল। পরে প্রায় ৩০ ঘন্টা চেষ্টা করে তার মৃতদেহ উদ্ধার করেন  কর্মীরা। এভাবেই হারিয়ে যায়, একটি পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি।

বৃটিশ আমল থেকেই গৌরীপুর একটি স্বনামধন্য বাজার। এই বাজারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন স্কুল- কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা। এই বাজারটি এমন একটি জায়গায় অবস্থিত, উত্তরে হোমনা-বাঞ্ছারামপুর সড়ক, দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে সড়ক। এই বাজারটি মূলতঃ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম স্থান, এখানে গড়ে  উঠেছে বিশাল কাঠের বাজার, বড় বড় মার্কেট ও সুপার শপসহ তৈরি পোশাক-এর মার্কেট। বড় মসজিদ রোডে গড়ে উঠেছে আধুনিক জুয়েলারি মার্কেট। আরো গড়ে উঠেছে গৌরীপুর-হোমনা রোডে বহুসংখ্যক হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ নামিদামি ঔষধের দোকান।  

এক কথায়, এই ব্যস্ততম বাজারটি সকলের কাছেই সুপরিচিত এবং জনপ্রিয়। কিন্তু আমাদের সঠিক অভিভাবকত্ব-নেতৃত্বের অভাব সর্বোপরি অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় বাজারটি হারাতে বসেছে তার নিজস্ব জৌলস। বিশেষ করে কাঁচা ও মাছ বাজার এই দুটি জায়গায় জলাবদ্ধতা সব সময় লেগেই থাকে। তার প্রধান কারণ হচ্ছে, এখানে পরিকল্পনানুযায়ী রাস্তা-ঘাটগুলো তৈরি করা হয়নি। এমনকি ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ভালো না। যার ফলে মাছ বাজার, তরকারি বাজার, মাংস বাজার ও চাল বাজারটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই। নাজুক এক পরিস্থিতি তৈরি হয় বাজারের প্রায় সব অলিগলিতে। 

তা ছাড়া গৌরিপুর-হোমনা সড়কের ব্যস্ততম এই জায়গায় সব সময় যানজট লেগেই থাকে। এই দীর্ঘ যানজটে আটকে কখনও কখনও রোগীর মৃত্যুর সংবাদও পাওয়া যায়। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা মাসের পর মাস চেষ্টা করেও এই যানজট নিরসন করতে পারেনি।

যদিও এই বাজারে কেউ প্রথম আসলে মনে করবেন, এটি একটি জেলা শহর। কারণ, এই বাজারের চারপাশে গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা এবং অসংখ্য বহুতল ভবন। কিন্তু তারপরও কথা থাকে, কি লাভ হবে এই অপরিকল্পিত উন্নয়ন, বহুতল ভবন নির্মাণ ও মানুষের সমাগম। কাজের কাজ তো কিছুই হচ্ছে না। গৌরীপুর বাজারের ঐতিহ্য ক্রমেই বিলীন হওয়ার পথে। এখানে যেসব খাল, পুকুর, নদী ও জলাশয় ছিল সেসব ভরাট হয়ে গেছে। নামমাত্র যা অবশিষ্ট আছে তাও একশ্রেণির রাঘববোয়ালদের দখলে চলে যাচ্ছে। জোর যার মুল্লক তার অপনীতিতে দখল বাণিজ্যে মেতে উঠেছে-কিছু ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান। গৌরীপুর -হোমনা সড়কের দু'পাশসহ বাজারের বিভিন্ন জায়গা দখল করে ভবনসহ নানা রকম স্থাপনা তৈরি করে মহাবাণিজ্য শুরু করেছে ভূমিখেকোরা। 

যার ফলে ভয়াবহ পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা ও যানজট যেন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের। এই বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন শঙ্কিত এলাকাবাসী।

এসব অপরাধ যেন কোন অপরাধই নয়-কারো কাছে।

আহ! দেখারও কেউ নেই, বলারও কেউ নেই। তবে কি আমরা ধরে নেব, অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে আমাদের প্রিয় গৌরীপুর বাজার? বন্ধ হয়ে যাবে গৌরীপুর বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য?? বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে ডান্ডি খ্যাত লন্ডন তথা গৌরীপুর বাজার???



www.a2sys.co

আরো পড়ুন