শিরোনাম

প্রকাশঃ ২০২১-১২-১৯ ১৬:৩৬:১৩,   আপডেটঃ ২০২৪-০৪-১৮ ১৮:০৯:১৪


রেলের বড় কর্তাদের ঘুম ভাঙবে কবে!

রেলের বড় কর্তাদের ঘুম ভাঙবে কবে!

ভালো করে মোটা কাপড় গায়ে চড়ালাম। দূরের পথ। যাবো রাজধানীতে। ক দিন সেখানে থেকে আসলাম। দুদিন ছুটি শেষে আবার ফেরা। দুই মাসের ট্রেনিং চলছে। উত্তরাঞ্চলে শীত জেকে বসেছে। আর রাজধানীতে এখন ফ্যান ছেড়ে রাতে ঘুমাতে হয়। রাত ৮:৩০ এ ট্রেন। শোভন বগিতে ব্ল্যাকারদের কাছ থেকে ডবলের থেকে বেশি দামে দুইটা টিকিট কিনতে সক্ষম হয়েছিলো সহকর্মী বাপ্পি। ট্রেনে বেশ চাপ যাত্রীর। টানা ৩ দিন বন্ধ থাকার কারনে সবাই গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন রাজধানী থেকে। যথাসময়ে ডোমার স্টেশনে ট্রেনে চেপে বসলাম সিট নম্বর অনুযায়ী। সৈয়দপুরে সহকর্মী বাপ্পি উঠলেন । ঠান্ডার কারনে ট্রেনের সব জানালা বন্ধ। শীত তেমন একটা অনূভূত হচ্ছেনা। বগিটাতে সম্ভবত ৯৯ জোড়া আসন রয়েছে। কোন কোন দিকে তিনজন বসার আসন । পাশের জন্য আংকেল সম্বোধন করে জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাবো?  বয়সে সর্বোচ্চ আমার থেকে চার-পাঁচ বছরে ছোট। মাথায় চুল না থাকার কারনে ইদানিং আমার বয়স একটু বেশি দেখায়। শুনতে ভালো না লাগলেও বললাম ঢাকা।  যদিও ব্ল্যাকার আমাদের জয়দেবপুর পর্যন্ত টিকিট দিয়ে, একই রকমের একটি দুই নম্বর  টিকিট ছাপিয়ে দিয়েছে ঢাকা পর্যন্ত । যাতে কমলাপুর রেলস্টেশনে বের হবার সময় চেক করলে কোন সমস্যা না হয়। এবং সেটি কাজে দিয়েছে। কমলাপুরের চেকাররা বুঝতে পারেনি। বুঝলাম এভাবেও সরকারের কত টাকার রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে প্রতিদিন।

 দুই ছিট পিছন থেকে একটি শিশুর অনবরত কান্নার আওয়াজ কানে আসছে। বাবা কোন ভাবেই কান্না থামাতে পারছেননা। মা কে দেখলাম আরেক বাচ্চা কোলে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। মনে হচ্ছে ট্রেনের বদ্ধ পরিবেশ হয়তো বাচ্চাটার পছন্দ হচ্ছেনা। এরমধ্যে আমার পাশে বসা সেই ভাতিজা, তিনি নারায়ণগঞ্জে চাকরি করেন। টিফিন বাটি বের করে রুটি সবজি খাওয়া শুরু করেছে। খাওয়া দেখে বেশ ক্ষুধার্ত মনে হলো। গপ গপ করে গিলছে। মনে হচ্ছে আশে পাশে সে ছাড়া আর কেউ নাই। 

সান্তাহার পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে পূরো ট্রেনের বগি ভর্তি হয়ে গেল। প্রচুর মানুষ দাড়িয়ে রয়েছে। বাপ্পি একবার অনেক কষ্টে টয়লেটে যেতে পেরেছিলো। মাথার উপড় দাড়িয়ে দুই তরুন গল্প করছে বেশ মজা করে। বিষয় ইউনিয়ন নির্বাচন। তারা দূজনই গাজিপুরের একটি গার্মেন্টসে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। তাদের কথায় যেটা বোঝা গেল ভোটকে ঘিরে ইউনিয়নে বাজারগুলোতো প্রতিদিন বেশ খাওয়া দাওয়া করাচ্ছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা। ওয়ার্ড মেম্বারদেরই নাকি ১০ লাখ বাজেট করেছে। চেয়ারম্যান ৫০ লাখের উপড়ে। কেউ কেউ কোটি টাকা। এদের মধ্যে একজন বললো ভোটের দুই দিন আগে ছুটি নিতে হবে। এলাকায় টাকা উড়ছে। আমি অনেকক্ষন ভাবলাম,  সেবা করার মানসিকতা নিয়ে যারা জনপ্রতিনিধি হতে চান, তারা কোটি টাকা খরচ কেন করেন?  এই টাকা কোথা থেকে তুলবেন তিনি?  কিছুদিন আগে গ্রামের এক চাচী ফোন দিয়েছিলেন এখন টাকা ছাড়া কোন কার্ড হয়না। অথচ সরকার সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এসব প্রজেক্ট চালু করেছেন। একটি বয়স্কভাতা কার্ডে ৬ হাজার টাকা দিতে হবে, এক হাজার কম সেটি চাওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিলেন। বুঝলাম জনপ্রতিনিধিদের আয় কোথায়, কিভাবে আয় করেন? 

ট্রেনের বিভিন্ন ফাঁকা জায়গায় পাটি বিছিয়ে যাত্রিরা বসে ঘুমাচ্ছেন। ট্রেনের ক্যান্টিনে যারা কাজ করেন বন্ধের সময়গুলোতে তারাও ভালো রোজগার করেন। বাম পাশের চারটি সিটে তিন বাচ্চাকে নিয়ে এক পরিবার বসে আছে। স্ত্রীর সাথে হালকা গলায় ঝগড়া চলছে। স্বামী বেশ বকাঝকা করছেন। একদিনের জন্য এসে ৪ হাজার টাকা খরচ। বেতন পাই ৯ হাজার।  এখনো মাসের পূরো সময় পরে আছে। স্ত্রী চুপচাপ বসে আছে। কোন কথা বলছেননা। নানান শ্রেণী পেশার মানুষ বগিতে। হয়তো প্রতিটি বগিতেই এমনই চাপ। ভোড় ৫ টায় কমলাপুরে এসে পৌঁছালাম। নকল টিকিট দিয়ে প্লাটফর্ম ছাড়লাম। সকালের ঢাকা বেশ শান্ত, তবে শীত অনূভূত হচ্ছে।

সাংবাদিক- নাজমুল ইসলাম নিশাত, রংপুর



www.a2sys.co

আরো পড়ুন