শিরোনাম

প্রকাশঃ ২০২১-০৩-১২ ১৬:৩২:০৯,   আপডেটঃ ২০২৪-০৪-২৩ ০৪:৫৩:৫৭


হাসপাতালের রেজিস্টারে লেখা জীবিত, অ্যাম্বুলেন্সে পাওয়া গেলো মৃত

হাসপাতালের রেজিস্টারে লেখা জীবিত, অ্যাম্বুলেন্সে পাওয়া গেলো মৃত

মাসুদ আলম

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক বাসযাত্রীর বিষয়ে হাসপাতালের রেজিস্টারে লেখা রয়েছে ‘চিকিৎসাধীন’। পরে তার খোঁজ মিলেছে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে। তবে স্বজনরা এসে তাকে জীবিত নয়, পেয়েছেন মৃত অবস্থায়। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে এই তরুণের।  

বৃহস্পতিবার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবিদ্বারে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিশা পরিবহনের একটি বাস গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেলে ১৫ যাত্রী আহত হন। ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে ১২ জনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছিল। আহতদের মধ্যে বাসযাত্রী মাহবুবুল আলম বাবুলকেও (২০) চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার উত্তর বাঙ্গরা গ্রামের শাহিন মিয়ার ছেলে। খবর পেয়ে স্বজনেরা কুমেক হাসপাতালে ছুটে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে এসে দেখেন তাদের রোগী (আহত বাবুল) নেই।

এরমধ্যে মেডিক্যাল কলেজের সামনে থাকা প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের একজন চালকের মোবাইল ফোন থেকে কল পান রোগীর স্বজনরা। বাবুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তারই অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এজন্য অ্যাম্বুলেন্স চালক তাদের কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং এই টাকা মোবাইল ফোনে দ্রুত পাঠাতে বলেন।

কিন্তু অনেক নাটকীয়তার পর তার স্বজনরা ওই অ্যাম্বুলেন্সে মৃত অবস্থায় পান বাবুলকে। এদিকে স্বজনদের কাছে অ্যাম্বুলেন্স চালক কিছুটা কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। সবশেষে চালক ১১ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে ওই রোগীর স্বজনরা বেশ বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালককে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তারা। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সামনে বাবুলের স্বজনদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স চালক বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। রোগীর স্বজনরা অভিযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও চালককে আটক করলেও তারা কৌশলে পালিয়ে যায়। তবে বাসযাত্রীর লাশটি ময়নাতদন্ত ছাড়াই অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে নিহতের স্বজনরা বৃহস্পতিবার বিকালে পুলিশের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। পুলিশ অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে আটকের জন্য তৎপরতা চালানোর কথা জানিয়েছে।

ওই অ্যাম্বুলেন্সের মালিকের নাম ইউছুফ। চালক রোহান (২৫) কোতোয়ালি থানা এলাকার মুরাদপুর এলাকার মো. রফিকের ছেলে।  অ্যাম্বুলেন্স নম্বর ঢাকা মেট্রো-৭১৩০৭২।

রোগীর স্বজন সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ভর্তি করা আমাদের রোগী অ্যাম্বুলেন্সে গেলো কীভাবে? তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়দায়িত্ব ছিল না।

অন্য রোগীদের স্বজনরা অভিযোগ করেন, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অসাধু কিছু চিকিৎসক অতিরিক্ত অর্থের লোভে বিভিন্ন চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে এ ধরনের অনিয়ম প্রায়ই করে থাকেন। তাদের এই অনিয়মের ফলে রোগী ও তার স্বজনরা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।  

তবে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ভোরবেলায় হাসপাতালে লোকবল কম থাকার সুযোগে জরুরি বিভাগের কাছ থেকে চক্রটি ওই রোগীকে জোর করে নিয়ে যায়। 

এ বিষয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, যে এই কাজটি করেছে সে গুরুতর অন্যায় কাজ করেছে। তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের কাজ করতে দেওয়া হবে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে হাসপাতালের রোগী অ্যাম্বুলেন্সে গেলো কীভাবে এর উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আজিম উল আহসানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আইনগতভাবে এবং সামাজিকভাবেও বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে এই সিন্ডিকেটে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।  



www.a2sys.co

আরো পড়ুন