শিরোনাম

প্রকাশঃ ২০২৪-০২-২৪ ১৮:৪৫:৫৭,   আপডেটঃ ২০২৪-০৫-১৬ ০১:৩৩:২৫


কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের মাঠে প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা!

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের মাঠে প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকর্মীরা!

নিজস্ব প্রতিবেদক 

দীর্ঘদিন নির্বাচন বর্জন কর্মসূচিতে আছে  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।  কিন্তু কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন উপনির্বাচনে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রকাশ্যে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছে কুমিল্লা মহানগর, আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কুমিল্লার ভোটের মাঠে আসলে কোনক্রমেই মনে হবে না বিএনপির ভোট বর্জনের নামে একটি কর্মসূচিতে আছে। 

জানা গেছে, আগামী ৯ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচন। নির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে দুজন আওয়ামী লীগ নেতা, আর দুজন বিএনপি ঘরনার। তাদের মধ্যে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ও কুমিল্লা মহানগর সেচ্ছাসেবক দলের সদ্য সাবেক আহবায়ক নিজাম উদ্দিন কায়সার। প্রার্থী কায়সার কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পূনর্বাসন সম্পাদক  ও বিএনপির কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার আহবায়ক হাজী আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক। 

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদের প্রার্থীদের প্রচারণায় ঘুরে ও নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দল ক্ষমতায় নেই একযুগের বেশি সময়। তাই কুমিল্লার নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন একরকম জিম্মি দশায় ছিলেন। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও তেমন উল্লেখ্যযোগ্য কোন নেতাকর্মী মাঠে নামেননি। দীর্ঘদিন বঞ্চনার পর তারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। এটি তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেঁকে যাওয়ার নির্বাচন। তাই নিরুপায় হয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন। নেতাকর্মীদের একটি অংশ বলছেন, এই নির্বাচন দলের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। অনেকে বলছেন, হাজী ইয়াছিন ও নিজাম উদ্দিন কায়সারকে ভালোবেসে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। গত নির্বাচনে এই তরুণ প্রার্থী বিএনপির তেমন সমর্থন না পেলেও প্রায় ৩০ হাজার ভোট পেয়েছেন। যার ফলে সাক্কুর ভোটেও ভাঁটা পড়েছে।

গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর সাবেক মেয়র মনিরুল সাক্কু কায়সারকে কারণ হিসেবে সরাসরি ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, তার নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ কায়সার। কারণ কায়সারের পাওয়া প্রায় ৩০ হাজার ভোট পাওয়ার কথা ছিল সাক্কুর।

কুমিল্লার সুধীমহল বলছেন, এবছর বিএনপি নেতাকর্মী শেষ পর্যন্ত যার পক্ষে থাকবে তার পক্ষেই যাবে নির্বাচনি পরিস্থিতি। তাই বিএনপি নির্বাচনে না এলেও ভোটের ফলাফলে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে দলটির নেতাকর্মীরা। 

নেতাকর্মীদের ক্ষুদ্রাংশ আছেন, সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষেও। তিনি টানা সিটি মেয়র থাকলেও দলের কর্মসূচিতে ছিলেন না। জেল-মামলায় নেতাকর্মীদের সাথে ছিলেন না। স্থানীয় এমপির সাথে তার ছিলো সখ্য। তাই নেতাকর্মীরা ভিড়ছেন তরুণ নেতা কায়সারের দিকে। নেতাকর্মীরা বলছেন এই নির্বাচন কোন স্বাভাবিক নির্বাচন নয়। এটি কুমিল্লা বিএনপি শক্তির পরীক্ষা। যেকারণে কোমরে গামছা বেঁধেই নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন বিএনপির পদবীধারী এসব নেতাকর্মী।

প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে কায়সারের প্রচারণার বহরে দেখা গেছে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। এর বেশিরভাগই হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনের অনুসারী। তারা প্রথম দিন থেকেই প্রকাশ্যে নির্বাচনের মাঠে আছেন। তাদের দাবি নিজাম উদ্দিন কায়সার এই ধারার রাজনীতি করছেন। তিনি এসময় আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা মামলার শিকার হয়ে কারাভোগও করেন। যেকারণে নেতাকর্মীরা তার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

প্রচারণার মিছিলে স্লোগান দিতে শোনা গেছে "খালেদা জিয়ার মার্কা, ঘোড়া মার্কা। তারেক রহমানের মার্কা, ঘোড়া মার্কা। বিএনপি মার্কা, ঘোড়া মার্কা। হাজী ইয়াছিনের মার্কা, ঘোড়া মার্কা ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের মার্কা, ঘোড়া মার্কা নামে।" দ্বিতীয় দিন মিছিল শেষে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে, হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের ছোট ছেলে ইফতেখার রশিদ অপুকে। এছাড়াও প্রচারণার মঞ্চে দেখা গেছে, সদর দক্ষিণ পূর্ব বিএনপির সাবেক সভাপতি এসএ বারি সেলিমকে, মহানগর বিএনপির যুগ্ম হওয়ার কাতর রহমান ছুটি, শহীদুল্লাহ রতন, সাবেক কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন, ভিপি মো. দুলাল, আব্দুল জলিল, আব্দুর রহমান, সদস্য জামাল হোসেন, রিয়াজ খান রাজু, জেলা বিএনপি যুগ মহোবায়ক রেজাউল কাইয়ুম, সদস্য শফিউল আলম রায়হান, মহানগর কৃষক দলের সদস্য ইকরাম হোসেন তাজ, ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য সচিব আমির হোসেনসহ ওয়ার্ড ও মহানগর, সদর দক্ষিণের নেতাকর্মীদের।

অপরপক্ষে সাক্কুও বিএনপির সমর্থনে আছেন বলে প্রচার করলেও তার বহরে বিএনপির বর্তমান কমিটির তেমন কাউকে দেখা যায়নি। সাবেকদের মধ্যে ছিল, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক নেতা আনোয়ার হোসেন, আবুল হোসেন ও মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা নুরে আলম প্রমুখ। তবে তার বহরে থাকা বেশিরভাগই বিভিন্ন ওয়ার্ড ও গ্রামের স্থানীয় নেতাকর্মী। 

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বাইরে গিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমাকে দল বহিষ্কার করেছে। দলের সাথে আমার নির্বাচনের কোন যোগসূত্র নেই। কুমিল্লার মানুষ জিম্মি। এখানে দলের কোন প্রশ্ন নেই। এবারের নির্বাচন কুমিল্লার মানুষের জিম্মি দশা থেকে মুক্তির নির্বাচন। তাই দলমত নির্বিশেষে মাঠে নেমে পড়েছে। এর আগের নির্বাচনে অনেকে গোপনে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু এবার প্রকাশ্যে আমার পক্ষে কাজ করছে। নিজ দায়িত্ব মানুষ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিজেরাই কাজ করছে। মানুষ একটা সুন্দর নগরীর জন্য শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছে। 

মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। মানুষ আমাকে চায় তাই নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচন করছি। বিএনপির নেতাকর্মীদের সমর্থন আছে। তবে নেতাকর্মীদের একটি অংশ নেই এটা সত্য। সবাইকি আর এক জায়গায় থাকবে? মানুষের যাকে ইচ্ছা তাকে ভোট দেবে।

কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, বিএনপি কোন নির্বাচনে যাচ্ছে না। যারা যাচ্ছে তারাও বহিষ্কৃত। আর যারা তাদের পক্ষ হয়ে কাজ করছে সবাই ব্যক্তিগতভাবে করছে। এটার সাথে দলের সম্পর্ক নেই।



www.a2sys.co

আরো পড়ুন