শিরোনাম

প্রকাশঃ ২০২০-১১-২৫ ২২:০৪:৩৬,   আপডেটঃ ২০২৪-০৪-২৫ ১৯:০৭:০৭


কুমিল্লায় অস্ত্রের মুখে দলিল ঘষামাজার ঘটনায় তিন কর্মচারীকে বদলি, ২৪ দিনেও হয়নি তদন্ত কমিটি

কুমিল্লায় অস্ত্রের মুখে দলিল ঘষামাজার ঘটনায় তিন কর্মচারীকে বদলি, ২৪ দিনেও হয়নি তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুমিল্লা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ছুটির দিনে অস্ত্রের মুখে দলিল ঘষামাজা করার অভিযোগে তিন কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলিল লেখক মো. আবুল বাসার ওরফে সাজ্জাদের সনদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। তবে ঘটনার ২৪ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের তদন্ত কমিটি হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা রেজিস্ট্রার মো. আনোয়ারুল হক চৌধুরী তাঁর দপ্তরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বদলি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আবদুস ছামাদকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী, মোহরার মো. আজাদকে ব্রাহ্মণপাড়া এবং অফিস সহায়ক (পিয়ন) আবদুল জলিলকে দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর অফিসে বদলি করা হয়। এর মধ্যে মো. আবদুস ছামাদ দলিল ঘষামাজার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী।

আরও পড়ুন

কুমিল্লায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রেকর্ড কক্ষের দলিল ঘষামাজার ঘটনায় মামলা

জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরের ছোটরা এলাকায় অবস্থিত জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের লাগোয়া সদর সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে গত ৩১ অক্টোবর বেলা দুইটায় দলিল লেখক মো. আবুল বাসার ওরফে সাজ্জাদ কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে অস্ত্র তাক করে রেকর্ড রুমের চাবি জোর করে কেড়ে নেন। এরপর দ্রুত রেকর্ড রুমের দরজার তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে দলিল লেখক মো. আবুল বাসার সাজ্জাদ গত ১৩ অক্টোবর রেজিস্ট্রি করা (নম্বর ৬৩২৭/২০) একটি দলিল নিয়ে রেকর্ড রুম থেকে রেজিস্ট্রার অফিসের বাইরে যান। কিছুক্ষণ বাইরে থাকার পর সাজ্জাদ পুনরায় দলিল নিয়ে এসে পিয়ন জলিলের হাতে তুলে দেন। এতে দলিলের প্রকৃতি পরিবর্তনসহ ৯ নম্বর পাতায় বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত করা হয়। সরকারি ভান্ডারে রক্ষিত আমমোক্তারনামা দলিলটি বের করে বাইরে নিয়ে ঘষামাজা করে দলিলের প্রকৃতি পরিবর্তন করা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় সংযুক্ত করে দলিল জাল করা হয়।

গত ৩১ অক্টোবর বেলা দুইটায় দলিল লেখক মো. আবুল বাসার ওরফে সাজ্জাদ কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে অস্ত্র তাক করে রেকর্ড রুমের চাবি জোর করে কেড়ে নেন। এরপর দ্রুত রেকর্ড রুমের দরজার তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন।

ওই খবর পেয়ে গত ৫ নভেম্বর মহাপরিদর্শক (নিবন্ধন) শহীদুল আলম কুমিল্লায় আসেন। এরপর তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে এর সত্যতা পান। ঘটনার ১৩ দিন পর গত ১২ নভেম্বর রাতে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় এ ঘটনায় মামলা হয়। সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. আবদুস ছামাদ বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। মামলার এজাহারনামীয় একমাত্র আসামি হলেন দলিল লেখক মো. আবুল বাসার সাজ্জাদ। অপর আসামিরা অজ্ঞাতনামা।

এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার দুই মাস পর সুস্থ হয়ে গত রবিবার কর্মস্থলে যোগদান করেন জেলা রেজিস্ট্রার মো. আনোয়ারুল হক চৌধুরী। ওই দিনই তিনি কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে তিন কর্মচারীকে বদলি করেন। তাঁদের কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার বাদী মো. আবদুস ছামাদও রয়েছেন।

সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অন্তত চারজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনাটি যাঁরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন এবং যাঁদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাবি নেওয়া হয় এবং দলিল সরানো হয়, তাঁদের অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে। মামলার বাদীকেও বদলি করা হয়। এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি।

তবে বদলি হওয়া ব্যক্তিরা এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

জেলা রেজিস্ট্রার মো. আনোয়ারুল হক চৌধুরী বলেন, ‘রবিবার কাজে যোগদান করেছি। ওই দিনই তিনজনকে বদলি করা হয়েছে। গত ২৪ দিনে কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি। দলিল লেখক মো. আবুল বাসার সাজ্জাদের সনদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আইন ও বিচার বিভাগের সচিব ও মহাপরিদর্শক (নিবন্ধন) মনিটরিং করছেন।’

দলিলটি কার, কারা এর পেছনে জড়িত, কোন এলাকার দলিল—এই প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেননি জেলা রেজিস্ট্রার।

কুমিল্লা সদরের সাবরেজিস্ট্রার গোবিন্দ সাহা ছুটিতে থাকায় তাঁর কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এর আগে তিনি দলিল ঘষামাজা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।


সূত্র-প্রথম আলো




www.a2sys.co

আরো পড়ুন